মূল্যায়ন ও এর প্রকারভেদ - Proshikkhon

মূল্যায়ন ও এর প্রকারভেদ

Evaluation and its types

শিক্ষাক্ষেত্রে শিখন-শেখানো কার্যক্রমের অন্যতম একটি অংশ হলো মূল্যায়ন। কেননা মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি যাচাই করা সম্ভব হয়। শিখনফলভিত্তিক উপস্থাপিত বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীরা কতটুকু অর্জন করতে পেরেছে তা নির্ধারণের প্রক্রিয়া হলো মূল্যায়ন৷ শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি নির্ধারণের জন্য মূল্যায়ন করা হয় এবং শিখনফল অর্জনে ঘাটতি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়৷মূল্যায়ন ও এর প্রকারভেদ সম্পর্কে একজন শিক্ষকের সম্যক ধারণা রাখা আবশ্যক। নিম্নে মূল্যায়ন ও এর প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

মূল্যায়ন কী?

মূল্যায়ন হলো এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে শিক্ষার সামগ্রীক উদ্দেশ্য বা শিখনফল অর্জনে শিক্ষার্থীরা কতটুকু এগিয়েছে তা নিরূপণ করা। এটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়াও বটে। মূল্যায়ন (Evaluation) শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো কোনো কিছুর মূল্য আরোপ করা। কোনো বিষয়ের উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীরা কতটুকু আয়ত্ত করতে পেরেছে তা নিরূপণের জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষার্থী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ,, বিচার বিশ্লেষণ ও প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যায়ন বলে।

শিক্ষা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন হল কোন শিক্ষার্থীর সাফল্য বা ব্যর্থতা পরিমাপ করে তার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। মনে করুন, পঞ্চম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী নৌশিন গণিতে ১০০ নম্বরের মধ্যে ১০০ নম্বর পেয়েছে। এই ১০০ নম্বর হল গণিতে তার সাফল্যের পরিমাপ। এখন শিক্ষক যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, নৌশিন পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতে সবচেয়ে ভাল। তাহলে পরিমাপে মূল্য আরোপ করা হল বা গণিতে নৌশিনের সাফল্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হল। এই প্রক্রিয়াটাই হল মূল্যায়ন।

মনে করুন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে এসেছেন। তিনি প্রশিক্ষণের তাত্ত্বিক পরীক্ষায় শতকরা ৬০ নম্বর পেলেন। তার শ্রেণী শিক্ষণ মোটামুটি, তার উপকরণ ব্যবহারও ভাল নয়। সব মিলিয়ে এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেয় হল যে, তিনি একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষক। অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষক হিসাবে তিনি মূল্যায়িত হলেন।

মূল্যায়নের মধ্যে শিক্ষার্থীর কৃতিত্বের পরিমাণগত ও গুণগত বর্ণনা এবং বর্ণনার ভিত্তিতে তার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অন্তর্ভুক্ত।

সুতরাং মূল্যায়ন =

শিক্ষার্থীর কৃতিত্বের পরিমাণগত বর্ণনা + শিক্ষার্থীর সাফল্যের গুণগত বর্ণনা কৃতিত্ব ও সাফল্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ

+

সুতরাং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কথাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা

  • শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখেছে তা যাচাই করতে সহায়তা করে৷
  • শিখন কার্যক্রমের সফলতা সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করে৷
  • শিক্ষার্থীদের সবল ও দুর্বল দিক চিহ্নিত করতে সহায়তা করে৷
  • শিখন ঘাটতি চিহ্নিত করে সেগুলো পূরণের জন্য ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করে৷
  • শিক্ষক পাঠ পরিচালনায় কতটুকু সফল হয়েছেন তা নির্ধারণে সহায়তা করে৷
  • শিক্ষার্থীর বিষয়বস্তু শিখনের দৃষ্টিভঙ্গিও উত্সাহের পরিমাণ নির্ধারণে সহায়তা করে৷
  •  শ্রেণির বিভিন্ন শিক্ষার্থীর পারগতার পার্থক্য নির্ণয়ে সহায়তা করে৷
  • শিক্ষকের শেখার আগ্রহ ও প্রেষণা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে৷
  • মূল্যায়ন শিক্ষাক্রম উন্নয়নে সহায়তা করে৷
  • শিক্ষকের পরবর্তী কার্যক্রম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন চূড়ান্করণে সহায়তা করে৷
  • শিক্ষার্থীর শিখনের অগ্রগতি অভিভাবককে অবহিত করতে সহায়তা করে৷

মূল্যায়নের প্রকারভেদ

আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন প্রকার মূল্যায়ন করা হয়। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রধানত ২ ধরণের মূল্যায়ন করা হয়। যথা-

১. গাঠনিক মূল্যায়ন (Formative Assessment)

২. সামষ্টিক বা চূড়ান্ত মূল্যায়ন (Summative Assessment)

গাঠনিক মূল্যায়ন

বিদ্যালয়ে সারা বছরব্যাপী শিখন কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি এবং আচরণের নানামূখী বিকাশ সম্পর্কে জানার জন্য ধারাবাহিকভাবে মূল্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়াকে গাঠনিক বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন বলে। অন্য কথায়, পাঠ চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীর অর্জন ও অগ্রগতি যাচাই করাই হলো গাঠনিক বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন। যেমন- পাঠ চলাকালীন প্রশ্ন করা, লিখিত বা মৌখিক অভীক্ষা, শ্রেণির কাজ, বাড়ির কাজ, কুইজ, চেক লিস্ট ইত্যাদি।

গাঠনিক মূল্যায়নের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল −

  • এই মূল্যায়ন করা হয় কোর্স চলাকালীন সময়ে। এটি শিক্ষণীয় বিষয়ে শিক্ষার্থী কতটুকু উদ্দেশ্য অর্জন করতে পেরেছে তা জানতে সহায়তা করে অর্থাৎ এর সাহায্যে শিক্ষার্থীর সাফল্য বা সবলতা জানা যায়।
  • শিক্ষার্থী শিক্ষণীয় বিষয়ের কতটুকু শিখতে পারে নি তা জানতে সহায়তা করে।
  • শিক্ষার্থীর ঐ বিষয়ে আর কি কি জানা প্রয়োজন তা নির্ণয়ে সহায়তা করে।
  • শিক্ষার্থীর দুর্বলতার জন্য কি কি নিরাময় ব্যবস্থা নেয়া যায় তা নির্ধারণে সহায়তা করে।
  • এই মূল্যায়নের ফল কখনই শিক্ষার্থী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যবহার করা হয় না। শিক্ষার্থীকে তার সাফল্য ও ব্যর্থতা সম্পর্কে ফিডব্যাক প্রদানে ব্যবহৃত হয়।

সামষ্টিক মূল্যায়ন

শিক্ষাবর্ষের শেষে বা মাঝামাঝিতে বা সাময়িক পাঠদান প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়ার পর শিক্ষার্থী কী কী যোগ্যতা অর্জন করল তা যাচাইয়ের জন্য যে মূল্যায়ন করা হয় তাকে সামষ্টিক মূল্যায়ন বলে। অর্থাৎ সামষ্টিক মূল্যায়ন হলো সেমিস্টার বা সাময়িক পরীক্ষা বা বার্ষিক পরীক্ষা বা পাবলিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীর মুল্যায়ন। বছরের কোন নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব সম্পর্কে অবহিত করাই এ ধরনের মুল্যায়নের উদ্দেশ্য। শিক্ষার্থী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মূল্যায়ন অর্থাৎ শিক্ষার্থীর পাশ-ফেল নির্ধারণের জন্য মূল্যায়ন। এই মূল্যায়নকে বলা হয় প্রান্তিক মূল্যায়ন। এ ধরনের মূল্যায়ন করা হয়, কোর্স সমাপ্তিতে বা বছরের শেষে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!